একযোগে এলজিইডির ৩৬ কার্যালয়ে দুদকের অভিযান
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)-এর বিভিন্ন কার্যালয়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে দেশব্যাপী বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) সকাল থেকে একযোগে চালু হওয়া এই অভিযান চলেছে এলজিইডির মোট ৩৬টি কার্যালয়ে।
দুদকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এলজিইডি কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে পাওয়া যাচ্ছিল। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম, নথিপত্র, আর্থিক লেনদেনসহ বিভিন্ন দিক যাচাই করতে এই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন দুদকের কর্মকর্তারা।
এলজিইডির দুর্নীতি নিয়ে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলের উদ্বেগের প্রেক্ষিতে দুদকের এই পদক্ষেপকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা মনে করেন, নিয়মিত নজরদারি ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই এ ধরনের দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্ভব।
অভিযানের আওতায় রয়েছে রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে এলজিইডির প্রধান কার্যালয়, চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর, এবং রাজশাহী, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কার্যালয়সমূহ।
দুদকের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এলজিইডি বাস্তবায়নাধীন কিছু বড় প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ এসেছে, বিশেষ করে যেসব প্রকল্পে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় হয়েছে বা হচ্ছে। নজরদারির আওতায় থাকা উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে:
-
গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প
-
উপজেলা পরিষদ ভবন নির্মাণ ও সংস্কার প্রকল্প
-
জেলা শহর উন্নয়ন প্রকল্প
-
নদী রক্ষা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প
-
বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল সংযোগ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প
প্রকল্প বাস্তবায়নে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা না থাকা, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার, সময়মতো কাজ শেষ না হওয়া এবং অর্থ বরাদ্দের অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অভিযোগ দুদকের নজরে এসেছে। এসবের প্রেক্ষিতেই চালানো হচ্ছে এই সমন্বিত অভিযান।
দুদকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রকৃত অনিয়মের প্রমাণ মিললে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এলজিইডির যেসব প্রকল্পগুলো দুর্নীতি বা অনিয়মের অভিযোগে বেশি নজরদারির আওতায় এসেছে, তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প (Rural Road Improvement Project)
এই প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন উপজেলায় গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ ও সংস্কার কাজে অনিয়ম, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার এবং অনুমোদিত ডিজাইন থেকে বিচ্যুতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
-
একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের অবকাঠামো উন্নয়ন :
সংশ্লিষ্ট অবকাঠামোগুলো নির্মাণে প্রকৃত কাজের চেয়ে অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো এবং সময়মতো কাজ না করার বিষয়গুলো তদন্তের আওতায় রয়েছে। -
পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (RIDP) :
এই প্রকল্পে রাস্তা, সেতু ও কালভার্ট নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সাইট পরিদর্শন ছাড়াই বিল অনুমোদন এবং অর্ধসমাপ্ত কাজের বিল পরিশোধের অভিযোগ উঠেছে। -
পল্লী সেতু নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্প :
কালভার্ট ও ছোট সেতুর নির্মাণে নকশা ও টেকসই মান রক্ষা না করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের ভিত্তিতে এই প্রকল্পও তদন্তের আওতায় এসেছে। -
উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনিক ভবন ও ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স নির্মাণ :
অনেক ক্ষেত্রে ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশে নিম্নমানের নির্মাণকাজ ও অনিয়মিত দরপত্র প্রক্রিয়ার অভিযোগে নজরদারিতে এসেছে এই প্রকল্পগুলো।
এসব প্রকল্পে ব্যয়ের স্বচ্ছতা, কাজের মান, সময়মতো সম্পাদন এবং দরপত্রের ন্যায্যতা খতিয়ে দেখছে দুদক।
0 Comments