ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের ‘গণহত্যা’ মামলায় যোগ দিচ্ছে ব্রাজিল
🌍 আন্তর্জাতিক ডেস্ক | 1mNews 01
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল ঘোষণা করেছে, তারা গাজায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা’ চালানোর অভিযোগে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়েরকৃত আন্তর্জাতিক আদালতের (আইসিজে) মামলায় হস্তক্ষেপ করতে যাচ্ছে।
এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এসেছে, যখন পশ্চিমা নয় এমন দেশগুলো থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইনি ও কূটনৈতিক চাপ জোরালো হচ্ছে।
বুধবার (২৩ জুলাই) ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলায় হস্তক্ষেপের প্রক্রিয়া এখন ‘চূড়ান্ত পর্যায়ে’ রয়েছে।
এক বিবৃতিতে বলা হয়,
“চলমান নৃশংসতার মুখে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নিষ্ক্রিয় থাকতে পারে না। নৈতিক দ্বিধা বা রাজনৈতিক গাফিলতির আর কোনো স্থান নেই। দায়মুক্তি আন্তর্জাতিক আইনকে দুর্বল করে এবং বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুন্ন করে।”
এ খবর প্রথম প্রকাশ করে ব্রাজিলিয়ান সংবাদমাধ্যম ফোলহা ডি সাও পাওলো। প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় সহায়তা প্রবেশে কঠোর বিধিনিষেধ এবং মানবিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপটে ব্রাজিল এই পদক্ষেপ নিচ্ছে।
ব্রাজিল জানায়, তারা ‘গণহত্যা প্রতিরোধ ও শাস্তি সংক্রান্ত কনভেনশন’ অনুযায়ী দক্ষিণ আফ্রিকার মামলায় আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়,
“ফিলিস্তিনের বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে ক্রমাগত সহিংসতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে, যা কেবল গাজা নয়, পশ্চিম তীরেও ছড়িয়ে পড়েছে।”
⚠️ ‘যুদ্ধের অস্ত্র’ হিসেবে খাদ্যাভাব ব্যবহারের নিন্দা
ব্রাজিল আরও জানিয়েছে, গাজা ও পশ্চিম তীরে সাধারণ মানুষ ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ শিকার হচ্ছে।
তারা ‘যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে খাদ্যাভাবের ন্যক্কারজনক ব্যবহার’-কে কঠোর ভাষায় নিন্দা জানিয়েছে।
স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও তুরস্ক ইতিমধ্যে একই মামলায় হস্তক্ষেপের আবেদন করেছে।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভাও সম্প্রতি গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানকে ‘গণহত্যা’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, কারণ
“ফিলিস্তিনিদের গণহত্যা থেকে সুরক্ষার অধিকার মারাত্মকভাবে লঙ্ঘিত হওয়ার বাস্তব সম্ভাবনা রয়েছে।”
🗣️ ইসরায়েল ও ইহুদি সংগঠনের প্রতিক্রিয়া
ব্রাজিলে ইসরায়েলের দূতাবাস এই ঘোষণাকে ‘অতিরঞ্জিত ও বাস্তবতাবিবর্জিত’ বলে অভিহিত করেছে।
তারা অভিযোগ করে, এতে হামাসের ভূমিকা উপেক্ষিত হয়েছে।
এছাড়া ব্রাজিলের জাতীয় ইহুদি সংগঠন কনিব বলেছে,
“এই পদক্ষেপ ব্রাজিল-ইসরায়েল বন্ধুত্বের ক্ষতি করবে এবং এটি চরমপন্থার পরিচয় বহন করে।”
⚖️ আইসিজে ও সাম্প্রতিক পরিস্থিতি
আন্তর্জাতিক আদালত এখনও গাজায় গণহত্যার বিষয়ে চূড়ান্ত রায় দেয়নি।
তবে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে তারা ইসরায়েলকে মানবিক সহায়তা প্রবেশে ছাড় দিতে ও সহিংসতা বন্ধে পদক্ষেপ নিতে আদেশ দিয়েছিল।
তবে বাস্তবে গাজায় সহায়তা প্রবেশ সীমিতই রয়ে গেছে। মার্চে ইসরায়েল পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে, ফলে মাসের পর মাস খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা বন্ধ থাকে।
পরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল-ঘনিষ্ঠ একটি গোষ্ঠী, ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (GHF)’, সীমিত সহায়তা চালু করে।
তবে মে মাসে এই গোষ্ঠীর বিতরণ কেন্দ্রে খাদ্যের জন্য অপেক্ষারত প্রায় ১,০০০ ফিলিস্তিনিকে ইসরায়েলি বাহিনী হত্যা করে, বলে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা জানায়।
জাতিসংঘ কর্মকর্তারা এসব সহায়তা কেন্দ্রকে ‘মৃত্যুর ফাঁদ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং জিএইচএফ-এর সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
📌 সূত্র: আল জাজিরা
✍️ প্রতিবেদন: 1mNews ডেস্ক
0 Comments