জুলাই গণহত্যা: শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে নবম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ আজ
শেখ হাসিনা ও কামালসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে চলছে বিচার প্রক্রিয়া
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে আলোচিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে ঘিরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আজ (২৬ আগস্ট) নবম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই মামলার প্রধান আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজন। মামলাটির বিচার কাজ চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ, বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে।
অষ্টম দিনের সাক্ষ্য: চক্ষুবিশেষজ্ঞদের বেদনাদায়ক বর্ণনা
২৫ আগস্ট অষ্টম দিনের সাক্ষ্যে আদালতে হাজির হন চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক খায়ের আহমেদ চৌধুরী, চিকিৎসক জাকিয়া সুলতানা নীলাসহ পাঁচজন।
তারা জানান—
-
আন্দোলনে আসা রোগীদের মধ্যে ৪৯৩ জন একটি চোখ হারিয়েছেন।
-
১১ জন উভয় চোখ হারিয়ে চিরস্থায়ী অন্ধত্ব বরণ করেছেন।
এই সাক্ষ্য আদালতে উপস্থিত সকলকে স্তব্ধ করে তোলে।
শহীদ মারুফের বাবার হৃদয়বিদারক জবানবন্দি
সেদিনই আদালতে সাক্ষ্য দেন রামপুরার শহীদ মারুফের বাবা। তিনি জানান,
১৯ জুলাই তার ছেলে গুলিবিদ্ধ হলে মুমূর্ষু অবস্থায় তিনি এম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে এম্বুলেন্স আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ছাত্রলীগ প্রায় ১৫–২০ মিনিট আটকে রাখে। এ সময় এক পুলিশ গুলিবিদ্ধ স্থানে আঘাত করলে মারুফের অবস্থা আরও খারাপ হয় এবং শেষ পর্যন্ত হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
সপ্তম দিনের সাক্ষ্য: ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ
২৪ আগস্ট সপ্তম দিনে সাক্ষ্য দেন রংপুর মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. রাজিবুল ইসলামসহ তিনজন। তারা মৃতদেহের ময়নাতদন্ত, গুলিবিদ্ধের আলামত ও আঘাতের ধরন আদালতে উপস্থাপন করেন।
ষষ্ঠ দিনের সাক্ষ্য: চিকিৎসক ও শহীদের মা
২০ আগস্ট ষষ্ঠ দিনে আদালতে সাক্ষ্য দেন চারজন—
-
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান
-
একই হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স শাহনাজ পারভীন
-
ইবনে সিনা হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাসানুল বান্না
-
শহীদ শেখ মেহেদী হাসান জুনায়েদের মা সোনিয়া জামাল
চিকিৎসকরা আহতদের শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসা-প্রক্রিয়ার বর্ণনা দেন। আর শহীদের মা আদালতে কেঁদে ফেলেন ছেলের মৃত্যুর স্মৃতি বর্ণনা করতে গিয়ে।
পঞ্চম দিনের সাক্ষ্য: বাবা, ভাই ও প্রত্যক্ষদর্শী
১৮ আগস্ট পঞ্চম দিনে আদালতে উপস্থিত ছিলেন—
-
শহীদ আস-সাবুরের বাবা মো. এনাব নাজেজ জাকি
-
শহীদ ইমাম হাসান তাইমের ভাই রবিউল আউয়াল
-
রাজশাহীর প্রত্যক্ষদর্শী জসিম উদ্দিন
তাদের জবানবন্দিতে উঠে আসে পুলিশি গুলিবর্ষণ ও সহিংসতার প্রত্যক্ষ চিত্র।
চতুর্থ ও এর আগের দিনগুলোর সাক্ষ্য
-
১৭ আগস্ট: সবজি বিক্রেতা আবদুস সামাদ, মিজান মিয়া, শিক্ষার্থী নাঈম শিকদার এবং শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহীনা বেগম সাক্ষ্য দেন।
-
৬ আগস্ট: প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সাক্ষ্য দেন রিনা মুর্মু ও সাংবাদিক একেএম মঈনুল হক।
-
৪ আগস্ট: আহত শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল ইমরান (পঙ্গু) ও চোখ হারানো দিনমজুর পারভীন জবানবন্দি দেন।
-
৩ আগস্ট: মামলার সূচনা বক্তব্যের পর প্রথম সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত হন আন্দোলনে আহত খোকন চন্দ্র বর্মণ। তিনি শেখ হাসিনা ও কামালসহ সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।
মামলার অগ্রগতি
এখন পর্যন্ত মামলায় মোট ২৪ জন সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। প্রত্যেকের জবানবন্দিতে ভেসে উঠছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময়কার রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন, নির্যাতন, গুলিবর্ষণ ও প্রাণহানির বাস্তব চিত্র।
ট্রাইব্যুনালের পরবর্তী কার্যক্রমে আরও নতুন সাক্ষী হাজির হবেন বলে জানা গেছে।
0 Comments