উখিয়া ও টেকনাফে হাজারের অধিক শিক্ষককে চাকরিচ্যুত: মহাসড়ক আটকে বিক্ষোভ
“সতর্ক না করে চাকরিচ্যুতি, পরিবার নিয়ে পথে বসার শঙ্কা”—চাকরি হারানো শিক্ষকদের কান্না
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গা শিবিরসংলগ্ন এলাকায় কর্মরত এক হাজারেরও বেশি স্থানীয় শিক্ষককে হঠাৎ করে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার (৩ জুন) সকাল থেকে চাকরি হারানো শিক্ষকরা উখিয়া-টেকনাফ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভে নেমেছেন। এতে রাস্তায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয় এবং এলাকাজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
চাকরিচ্যুতির পেছনে কী কারণ?
প্রত্যক্ষদর্শী ও শিক্ষক নেতাদের দাবি,
-
জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এনজিওর অধীন পরিচালিত শিক্ষাকেন্দ্রগুলোতে কর্মরত শিক্ষকরা বিনা পূর্বাভাসে বা নোটিশ ছাড়াই চাকরিচ্যুত হন।
-
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বক্তব্য অনুযায়ী, পাঠ্যক্রম ও কর্মপরিকল্পনায় পরিবর্তনের ফলে কিছু পুরনো স্টাফকে বাদ দেওয়া হয়েছে, যদিও কারও বিরুদ্ধে অপেশাদারিত্ব বা অনিয়মের অভিযোগ ছিল না।
উল্লেখ্য, এসব শিক্ষক গত কয়েক বছর ধরে রোহিঙ্গা শিশুদের “শিক্ষা ইন ইমারজেন্সি” প্রোগ্রামের আওতায় পাঠদানের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
বিক্ষোভে কী ঘটেছে?
-
সকাল ৯টা থেকে উখিয়ার পালংখালী ও কুতুপালং এলাকায় শত শত চাকরি হারানো শিক্ষক রাস্তায় নামেন
-
উখিয়া-টেকনাফ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় প্রায় ৩ ঘণ্টার বেশি সময়
-
শিক্ষকদের হাতে ছিল পোস্টার: “চাকরি ফিরিয়ে দাও”, “আমরা শিক্ষক, ভিক্ষুক নই”
-
বিক্ষোভে নারী শিক্ষকদের উপস্থিতিও ছিল লক্ষণীয়
-
পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন ঘটনাস্থলে এসে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করতে আলোচনা শুরু করে
শিক্ষকদের বক্তব্য
চাকরি হারানো একজন শিক্ষক জানান:
“গত ৫ বছর ধরে রোহিঙ্গা শিশুদের পড়িয়ে আমরা নিজেদের জীবন চালিয়েছি। হঠাৎ করে বলছে—তোমার দরকার নেই। বাড়ি ভাড়া, সন্তানদের খরচ, বাবা-মার ওষুধ—সব এখন অনিশ্চয়তায়।”
অন্য একজন শিক্ষক বলেন:
“আমরা মানবিক কাজ করছিলাম, বিনিময়ে আমাদের সঙ্গে এমন অমানবিক আচরণ করা হলো!”
কী বলছে প্রশাসন ও এনজিও কর্তৃপক্ষ?
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন,
“বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। সংশ্লিষ্ট এনজিও ও ইউএন প্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।”
একটি এনজিওর মুখপাত্র জানান,
“শিক্ষা কার্যক্রমে কাঠামোগত রদবদল এসেছে। কিছু পদে কর্মী হ্রাস করতে হয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য অন্য প্রকল্পে স্থানান্তরের ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে।”
স্থানীয় প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ
-
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, হঠাৎ এত বিপুলসংখ্যক লোকের চাকরি হারানো উপজেলার অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে
-
এ ছাড়া অনেকেই মনে করছেন, স্থানীয় জনবল বাদ দিয়ে বিদেশি বা ঢাকার জনবল আনার চেষ্টা চলছে, যা নীতিগতভাবেও প্রশ্নবিদ্ধ
সামগ্রিক প্রেক্ষাপট
রোহিঙ্গা সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে উখিয়া-টেকনাফ অঞ্চলে শতাধিক এনজিও কাজ করছে। এতে স্থানীয় তরুণদের বড় একটি অংশ বিকল্প কর্মসংস্থান পেয়েছিল। এখন সেই নিয়োগ নীতি ধীরে ধীরে সংকুচিত হচ্ছে—যা ভবিষ্যতের জন্য অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।
শেষ কথা
চাকরিচ্যুত শিক্ষকরা দাবি তুলেছেন, ফেয়ার রিভিউ কমিটি গঠন করে তাঁদের চাকরির বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে হবে। তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, দাবি না মানা হলে আন্দোলনের পরিসর আরও বাড়ানো হবে।
0 Comments