ভোটের তারিখ: ৫ আগস্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করবে বিএনপি, পরিবেশ নিয়ে খুশি নয় জামায়াত
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের একটি সম্ভাব্য সময়সীমা নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে সম্প্রতি লন্ডনে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পর। সেখানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অংশ নেন এবং বৈঠক শেষে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশিত হয়। তবে এখনো পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন বা প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট কোনো তারিখের ঘোষণা আসেনি, যা ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা ও সংশয়।
প্রধান উপদেষ্টার আশ্বাস, তবে নেই লিখিত ঘোষণা
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠকেও প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন প্রসঙ্গে আলোচনা করেন এবং তাদের আশ্বস্ত করেন। তবে সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা না করায় সংশ্লিষ্ট দলগুলো এখনও পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন,
“ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে রোজার শুরুর এক সপ্তাহ আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) যথাযথ প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশনা দেবেন—এমনটাই আমরা বুঝেছি। কিন্তু আমরা এখনও সেই নির্দিষ্ট ঘোষণা পাইনি। গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি ৫ আগস্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করবো।”
তড়িৎ রাজনৈতিক নির্দেশনার দাবি
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক মনে করেন,
“সরকারের উচিত অবিলম্বে নির্বাচন কমিশনকে একটি রাজনৈতিক নির্দেশনা দেওয়া। এতে নির্বাচনকেন্দ্রিক যে অনিশ্চয়তা ও সন্দেহ রয়েছে, তা দূর হবে। অন্যথায় সরকারের উদ্দেশ্য নিয়েও জনমনে প্রশ্ন দেখা দেবে।”
জামায়াত বলছে পরিবেশ অনুপযুক্ত, সরাসরি তারিখ নিয়ে নীরবতা
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ সরাসরি নির্বাচনের তারিখ নিয়ে কিছু না বললেও বলেন,
“সরকার তো বলেছে, তারা ইতিহাসের সেরা নির্বাচন আয়োজন করবে। তাহলে সেই প্রস্তুতিটাও হওয়া উচিত সর্বোচ্চ মানের। এখনো দেশে নির্বাচন করার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি। আমরা আইনশৃঙ্খলার দিকটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।”
অন্তর্বর্তী সরকারে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার দাবি
নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারে এমন কিছু উপদেষ্টা রয়েছেন যাদের নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিএনপি, জামায়াত ও অন্যান্য দল। তারা মনে করে, বিতর্কিত ও ব্যর্থদের বাদ দিয়ে এই সরকারকে আরও গ্রহণযোগ্য করতে হবে।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন,
“সরকারে থাকা কিছু উপদেষ্টা নিরপেক্ষতা হারাতে পারেন। বিশেষ করে একটি নতুন দল গঠিত হলেও সেখানকার দুইজন এখনো সরকারের অংশ—এটা জনগণ ইতিবাচকভাবে দেখবে না।”
হামিদুর রহমান আযাদ মনে করেন,
“যেসব মন্ত্রণালয়ে সফলতা আছে, তাদের রাখা যেতে পারে। কিন্তু যেসব জায়গায় ব্যর্থতা রয়েছে, সেখানে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিতে হবে।”
সাইফুল হক বলেন,
“এই অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো নিরপেক্ষ থাকতে হবে। কোনও দল, মত বা গোষ্ঠীকে পরোক্ষভাবে মদদ দেওয়া একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। ১০-১২ জনের একটি দল দিয়ে এমন সরকার গঠিত হতে পারে।”
নির্দিষ্ট তারিখ না এলে বাড়বে আস্থার সংকট
রাজনৈতিক নেতাদের মতে, জুলাই সনদ ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ অন্যান্য প্রতিশ্রুতিতে দৃশ্যমান অগ্রগতি থাকলেও, নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণায় বিলম্ব হলে জনআস্থার সংকট তৈরি হবে। পাশাপাশি আবারও তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবিও মাথাচাড়া দিতে পারে।
0 Comments